পূর্বতন সরকারের সময়ে সংঘটিত সবগুলি খুনের মামলা নতুন করে খোলা হবে: মুখ্যমন্ত্রী
Saturday, September 28, 2024
আগরতলা, ২৮ সেপ্টেম্বর: পূর্বতন সরকারের সময়ে সংঘটিত সবগুলি খুনের মামলা নতুন করে খোলা হবে। আইনের যাবতীয় বিষয়াদি খতিয়ে দেখে খুব সহসাই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেবা পক্ষকাল কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রামনগর মন্ডলের যুব মোর্চার উদ্যোগে আগরতলার কৃষ্ণনগরে আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এর পাশাপাশি গান্ধীঘাট সংলগ্ন বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারে আয়োজিত অপর একটি রক্তদান কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে সেবা পক্ষকাল কর্মসূচি রাখা হয়েছে। এর মাঝখানে ২৫ সেপ্টেম্বর পন্ডিত দীন দয়াল জীর জন্মদিন। আর ২ অক্টোবর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। এজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম রাখা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজকের এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এমনিতেই সারা বছর ধরে আমরা নানা সামাজিক কার্যক্রম করি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেবাই ধর্ম। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা মানুষের জন্য কাজ করি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের তো কোন কাজ নেই। শুধু ৮/১০ জন লোক নিয়ে আন্দোলন। আর বলবে রাজ্যে আইনের শাসন নেই। মানুষকে হারিয়ে ফেলেছে তারা। তাদের প্রতি এখন মানুষের আস্থা নেই। এজন্য মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি দেয় তারা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাস্তায় নামে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। নির্বাচনের পরে তারা বসেই থাকে। আর বলবে এই নির্বাচন প্রহসন। এগুলি তারা করে রুটিন মাফিক। আর নির্বাচনের আগে বলবে - আর বেশিদিন নেই। আমরা সরকারে চলে আসছি। এগুলি দেখতে দেখতে মানুষ এখন ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর আমরা কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য বেশি বেশি কাজ করা যায় সেনিয়ে প্রতিনিয়ত ক্যাবিনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। মানুষকে কিভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায় সেনিয়ে আমরা কাজ করি।মন্ডলের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে রক্তদান, বস্ত্রদান, স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রতিনিয়ত করা হয়। আমরা প্রতিটি বাড়িতে প্রতি ঘরে সুশাসন পৌঁছে দিই। মানুষের সুখ দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। আর কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধে লিপ্ত থাকে। ওরা ভেবেছে মানুষ সেসব কথা ভুলে গেছে। ওদের সময়ে কত লোক খুন হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে ওরা একটা আঙুল এই সরকার আর পার্টির দিকে দেখায়। কিন্তু ওরা জানে না চারটা আঙুল তাদের দিকে থাকে। মানুষ সবই বুঝেন। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের যে সুবিধা আমরা পাচ্ছি তাতে মানুষ খুশি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যিকার অর্থে মানুষের পাশে থাকতে চায়। এবার যেভাবে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে, চারিদিকে বন্যা পরিস্থিতি, তিনদিনের মধ্যে যে বৃষ্টি হয়েছে যা আগে ত্রিপুরার ইতিহাসে হয় নি। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সরকার সহ দলের কার্যকর্তা সহ সকলে মাঠে নেমে গেছেন। অথচ তখন তাদের টিকির নাগালও পাওয়া যায় নি। আর যখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে তখন সাদা কুর্তা পরে এখানে সেখানে বেরিয়ে পড়েছেন। কোন জায়গায় যাওয়ার সময় মানুষ নাকি তাদের আটকে দেয়। তখন তারা পুলিশকে ফোন করেন, আমাকে ফোন করেন। আমি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই। কিন্তু এরপরও তারা বলে এখানে গণতন্ত্র নেই। অথচ তাদের সময়ে গণতন্ত্র কোথায় ছিল সেটা কয়েকদিন পর সবাই জেনে যাবেন। যখন তাদের পুরো ইতিহাস সামনে আসবে। আমরা বলেছি এখানে যতগুলি খুন হয়েছে সেগুলি আইনী প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে নতুন করে খোলা হবে। এদিন রক্তদানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রক্তের কোন ধর্ম বা জাত হয় না।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিজেপি প্রদেশ সহ-সভাপতি পাপিয়া দত্ত, মন্ডল সভাপতি তাপস দেব, পুর কর্পোরেটর মনোজ দেবরায় সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। এই কর্মসূচি থেকে এদিন রামনগর মন্ডল কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।
এদিকে বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারে আয়োজিত অপর রক্তদান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার, ক্লাব সভাপতি ও সম্পাদক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাজ সেবার অংশ হিসেবে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারের পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা ও এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে রক্তদান এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষ রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। বিভিন্ন ক্লাব সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি প্রতিনিয়ত এই সামাজিক কাজে যোগদান করছে।